টিকটক অ্যাকাউন্ট ডিলেট না করায় ১৬ বছর বয়সি এক কিশোরীকে গুলি করে হত্যা করেছেন তার বাবা। মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডি শহরে। শুক্রবার (১১ জুলাই) স্থানীয় পুলিশ এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, বাবা মেয়েকে টিকটক ব্যবহার না করার জন্য নিষেধ করেছিল, কিন্তু মেয়ে সেটি মানেনি। এর জেরে বাবা গুলিবিদ্ধ করে মেয়েকে হত্যা করেন। প্রথমে পরিবার ঘটনাটি আত্মহত্যা হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করলেও তদন্তে ‘অনার কিলিং’ (পরিবারের সম্মানের নামে হত্যা) প্রমাণিত হয়েছে। ঘটনার পর বাবা গ্রেপ্তার হয়েছেন।
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া এক বিবৃতিতে রাওয়ালপিন্ডি পুলিশের এক মুখপাত্র জানান, মেয়েটির বাবা তাকে টিকটক অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলতে বলেছিলেন। রাজি না হওয়ায়, তার বাবা তাকে গুলি করে হত্যা করেন।
পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছিল মঙ্গলবার (৮ জুলাই)। প্রাথমিকভাবে মেয়েটির পরিবার এ ঘটনাকে আত্মহত্যা হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছিল। তবে তদন্তে পুলিশ নিশ্চিত হয়, এটি একটি পরিকল্পিত ‘অনার কিলিং’ বা সম্মান রক্ষার্থে করা হত্যাকাণ্ড।
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পাকিস্তানে নারীদের উপর ‘সম্মান রক্ষার’ নামে সহিংসতা দীর্ঘদিনের বাস্তবতা। বিশেষ করে পরিবার ও সমাজের চোখে ‘অনুচিত’ বা ‘অশালীন’ আচরণ- তা অফলাইন হোক বা অনলাইনে- নারীদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।টিকটকের মতো সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপে মেয়েদের উপস্থিতি অনেকক্ষেত্রেই পরিবার বা সমাজের রক্ষণশীল অংশের বিরূপ প্রতিক্রিয়া ডেকে আনে।
এর এক মাস আগেই পাকিস্তানে আরেকটি আলোচিত ঘটনা ঘটে। সানা ইউসুফ নামে ১৭ বছর বয়সী এক জনপ্রিয় টিকটকারকে তার ঘরে ঢুকে গুলি করে হত্যা করেন এক যুবক। সানা তার ভিডিওতে রেস্তোরাঁ পরিদর্শন, স্কিনকেয়ার রিভিউ, ও ঐতিহ্যবাহী পোশাক নিয়ে কনটেন্ট তৈরি করতেন।
পাকিস্তানে টিকটক নারীশক্তির জন্য আয় ও আত্মপ্রকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হলেও সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বাধা ও নিরাপত্তা সমস্যা এখনও বিদ্যমান। ২০২৫ সালের মোবাইল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্টে দেখা গেছে, পাকিস্তানে মাত্র ৩০ শতাংশ নারী স্মার্টফোন ব্যবহার করেন, যেখানে পুরুষদের হার ৫৮ শতাংশ।
এমএএন
মন্তব্য করুন: